SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - সবাই কাছাকাছি | NCTB BOOK

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এখন খুবই পরিচিত একটি বিষয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজ থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই করে ফেলতে পারি। ঊনবিংশ শতকে টেলিফোন ও টেলিগ্রাফের বিকাশ উন্নয়নে মানুষের যোগাযোগে আর ক্ষমতা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। বিংশ শতাব্দীতে যোগাযোগের বিপ্লব এনেছে রেডিও, টেলিভিশন, সেলফোন বা ফ্যাক্স। সাম্প্রতিক কালে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট।
 

১৩.৪.১ রেডিও
রেডিও (চিত্র ১৩.০৬) বিনোদন ও যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রেডিওতে আমরা খবরের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য গান বাজনা এমনকি পণ্যের বিজ্ঞাপনও শুনতে পারি। সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী তথ্য আদানপ্রদানের জন্য নিজস্ব রেডিও ব্যবহার করে। মোবাইল বা সেলুলার টেলিফোন যোগাযোগেও রেডিও প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। কোনো রেডিও সম্প্রচার স্টেশনের স্টুডিওতে যখন কেউ মাইক্রোফোনে কথা বলে, তখন সেই শব্দ বিদ্যুৎ তরঙ্গে রূপান্তরিত হয়। আমরা ২০ Hz থেকে ২০,000 Hz কম্পাঙ্ক পর্যন্ত শুনতে পারি কাজেই শব্দ থেকে বিদ্যুৎ তরঙ্গে রূপান্তরিত সিগন্যালটিও এই কম্পাঙ্কের হয়। এটিকে পাঠানোর জন্য উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গের সাথে যুক্ত করা হয়। এই উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গকে বাহক তরঙ্গ বলে বাহক তরঙ্গের সাথে যুক্ত করার এই প্রক্রিয়াটিকে মডুলেশন বলা হয়। এই মডুলেটেড তরঙ্গ এমপ্লিফায়ার দিয়ে বিবর্ধন করা হয় এবং এন্টেনার সাহায্যে চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ বা রেডিও তরঙ্গ ভূমি তরঙ্গ হিসেবে কিংবা বায়ুমণ্ডলের আয়োনোস্পিয়ারে প্রতিফলিত হয়ে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে (চিত্র ১৩.০৭)। গ্রাহক যন্ত্রের ভেতর যে এন্টেনা থাকে সেটি এই রেডিও তরঙ্গকে বিদ্যুৎ তরঙ্গে রূপান্তর করে নেয়। এরপর প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করে বাহক তরঙ্গ থেকে আলাদা করে নেওয়া হয়— এই প্রক্রিয়াটিকে ডিমডুলেশন বলা হয়। ডিমডুলেটেড বৈদ্যুতিক সিগন্যালটিকে এমপ্লিফায়ার দিয়ে বিবর্ধন করে শোনার জন্য স্পিকারে পাঠানো হয় ।রেডিও তরঙ্গ হিসেবে পাঠানোর জন্য রেডিও সম্প্রচার স্টেশনগুলো আলাদা আলাদা কম্পাঙ্ক ব্যবহার করে। গ্রাহক যন্ত্রও নির্দিষ্ট কোনো স্টেশন শুনতে হলে সেই কম্পাঙ্কের সিগন্যালে টিউন করে নেয়— তাই আলাদা আলাদা রেডিও স্টেশন সবাই নিজের অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারে এবং শ্রোতারা নিজের পছন্দের রেডিও স্টেশনের অনুষ্ঠান শুনতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে গ্রাহক তরঙ্গের উচ্চতা বা বিস্তার বাড়িয়ে বা কমিয়ে (Amplitude Modulation) সিগন্যালটি সংযুক্ত করা হয় বলে এই পদ্ধতিটির নাম AM রেডিও। যদি বিস্তার সমান রেখে কম্পাঙ্ক পরিবর্তন করে মডুলেট করা হতো (Frequency Modulation) তাহলে এই পদ্ধতিকে বলা হতো FM রেডিও।

১৩.৪.২ টেলিভিশন
তোমরা সবাই টেলিভিশন দেখেছ এবং জান যে টেলিভিশন এমন একটি যন্ত্র, যেখানে দূরবর্তী কোনো টেলিভিশন সম্প্রচার স্টেশন থেকে শব্দের সাথে সাথে ভিডিও বা চলমান ছবিও (চিত্র ১৩.০৮) দেখতে পাই। ১৯২৬ সালে জন লঞ্জি বেরার্ড প্রথম টেলিভিশনের মাধ্যমে ভিডিও বা চলমান ছবি পাঠিয়েছিলেন। তাঁর পদ্ধতিটি ছিল একটি যান্ত্রিক পদ্ধতি, পরে ইলেকট্রনিক্স ব্যবহার করে ছবি পাঠানোর পদ্ধতিটি আরো আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।রেডিও ট্রান্সমিটার এবং রিসিভার কীভাবে কাজ করে সেটি যদি তোমরা বুঝে থাকো তাহলে টেলিভিশন কীভাবে কাজ করে সেটিও সহজেই বুঝতে পারবে। টেলিভিশনে শব্দ এবং ছবি আলাদা সিগন্যাল হিসেবে পাঠানো হয়। শব্দ পাঠানোর এবং গ্রাহক যন্ত্রে সেটি গ্রহণ করে শোনার বিষয়টি ইতোমধ্যে বর্ণনা করা হয়েছে।  তখন সেগুলোকে আলাদা আলাদা স্থিরচিত্র মনে না হয়ে একটি চলমান ছবি বলে মনে হয়। টেলিভিশনে রঙিন ছবি পাঠানোর জন্য টেলিভিশন ক্যামেরা প্রতিটি ছবিকে লাল-সবুজ ও নীল (RGB) এই তিনটি মৌলিক রংয়ে ভাগ করে তিনটি আলাদা ছবি তুলে নেয়। টেলিভিশন ক্যামেরার ভেতরে আলো CCD (Charge Coupled Device) ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে রূপান্তরিত করা হয়। এই বৈদ্যুতিক সিগন্যালকে উচ্চ কম্পাঙ্কের বাহক তরঙ্গ ব্যবহার করে এন্টেনার ভেতর দিয়ে পাঠানো হয় (চিত্র ১৩.০৯)।
গ্রাহক যন্ত্র বা টেলিভিশন সেট তার এন্টেনা দিয়ে উচ্চ কম্পনের বাহক তরঙ্গকে গ্রহণ করে এবং রেকটিফায়ার দিয়ে বাহক তরঙ্গকে সরিয়ে মূল ছবির সিগন্যালকে বের করে নেয়। আগে এই সিগন্যাল থেকে তিন রংয়ের তিনটি ছবিকে ক্যাথোড রে টিউব নামের পিকচার টিউবে তার ক্ষিনে ইলেকট্রন গান দিয়ে প্রক্ষেপণ করা হতো। এখন পিকচার টিউব প্রায় উঠে গিয়েছে এবং এলইডি (Light Emitting Diode) টেলিভিশন তার জায়গা দখল করেছে। এখানে ইলেকট্রন গান দিয়ে কিনে ছবি তৈরি না করে লাল সবুজ ও নীল রংরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলইডিতে বিদ্যুৎ প্রবাহ করে ছবি তৈরি করা হয়। এলইডি টেলিভিশনে ছবির ঔজ্জ্বল্য অনেক বেশি এবং গুণগত মানও অনেক ভালো।এখানে উল্লেখ্য যে এন্টেনার সাহায্যে টেলিভিশনের সিগন্যাল পাঠানো ছাড়াও কো-এক্সিয়াল ক্যাবল দিয়েও সিগন্যাল পাঠানো হয়। এই ধরনের টিভির সম্প্রচার ক্যাবল টিভি নামে পরিচিত। এছাড়াও স্যাটালাইট টিভি নামে এক ধরণের টিভি অনুষ্ঠানের সম্প্রচার করা হয়, এটি মহাকাশে পাঠানো উপগ্রহ বা স্যাটালাইট থেকে সরাসরি পৃথিবীতে পাঠানো হয় ।
 

১৩.৪.৩ টেলিফোন ও ফ্যাক্স:
টেলিফোন (চিত্র ১৩.১০) হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি যোগাযোগ মাধ্যম। আমরা এখন এই টেলিফোন ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে একজন মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারি।
 

ল্যান্ডফোন
১৮৭৫ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেছিলেন, নানা ধরনের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেটি বর্তমান আধুনিক টেলিফোনে রূপ নিয়েছে, কিন্তু তার মূল কাজ করার প্রক্রিয়াটি ঠিক এখনো আগের মতোই আছে। চিত্র ১৩.১৩: ল্যান্ডফোন এবং মোবাইল বা সেলুলার ফোন।  তোমরা সবাই টেলিফোন দেখেছ এবং ব্যবহার করেছ। টেলিফোন পাঁচটি উপাংশ থাকে।

(ক) সুইচ : যেটি মূল টেলিফোন নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত অথবা বিচ্ছিন্ন করে

(খ) রিংগার: যেটি শব্দ করে জানিয়ে দেয় যে কেউ একজন যোগযোগ করেছে

(গ) কি-প্যাড: যেটি ব্যবহার করে একজন অন্য একজনকে ডায়াল করতে পারে

(ঘ) মাইক্রোফোন: যেটি আমাদের কণ্ঠস্বরকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিবর্তন করে

(ঙ) স্পিকার: যেটি বিদ্যুতিক সিগন্যালকে শব্দে রূপান্তর করে শোনার ব্যবস্থা করে দেয়।প্রত্যেকটি টেলিফোনই তামার তার দিয়ে আঞ্চলিক অফিসের সাথে যুক্ত থাকে। আমরা যখন কথা বলার জন্য কোনো নম্বরে ডায়াল করি, তখন আঞ্চলিক অফিসে সেই তথ্যটি পৌঁছে যায়। সেখানে একটি সুইচ বোর্ড থাকে যেটি নির্দিষ্ট গ্রাহকের টেলিফোনের সাথে যুক্ত করে দেয়। যদি আমরা অনেক দূরে কিংবা ভিন্ন কোনো দেশে একজনের সাথে কথা বলতে চাই, তাহলে সুইচবোর্ড সেভাবে আমাদেরকে নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করে দেয়। প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ার আগে যখন পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুইজন মানুষ টেলিফোনে কথা বলত, তখন কথাবার্তা পাঠানোর জন্য তাদের টেলিফোনকে তামার তার দিয়ে সংযুক্ত করে দিতে হতো, সে কারণে পুরো প্রক্রিয়াটা ছিল অনেক খরচ সাপেক্ষ। আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থায় পুরোটা অনেক সহজ হয়ে গেছে, এখন একটি অপটিক্যাল ফাইবারে একই সাথে আক্ষরিক অর্থে লক্ষ লক্ষ মানুষের কথাবার্তা পাঠানো সম্ভব তাই টেলিফোন কথাবার্তা বলার বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।মোবাইল টেলিফোন ল্যান্ডফোন যেহেতু তামার তার দিয়ে যুক্ত তাই এটাকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখতে হয় এবং টেলিফোন করার জন্য কিংবা টেলিফোন ধরার জন্য সেই জায়গাটিতে আসতে হয়। মোবাইল টেলিফোন আমাদের সেই বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দিয়েছে এবং এই টেলিফোনটি আমরা আমাদের সাথে রেখে যেকোনো জায়গায় যেতে পারি এবং যতক্ষণ আমরা নেটওয়ার্কের ভেতরে আছি, যেকোনো নম্বরে ফোন করতে পারি, কথা বলতে কিংবা এস.এম.এস বিনিময় করতে পারি। সে কারণে মোবাইল ফোন এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগমাধ্যম।
তোমরা সবাই দেখেছ মোবাইল টেলিফোন কোনো তার দিয়ে যুক্ত নয়—যার অর্থ এটি ওয়ারলেস বা রেডিও তরঙ্গ দিয়ে যোগাযোগ করে থাকে। কাজেই প্রত্যেকটি মোবাইল টেলিফোন আসলে একই সাথে একটি রেডিও ট্রান্সমিটার এবং রেডিও রিসিভার।ল্যান্ড টেলিফোনে যে যে যান্ত্রিক উপাংশ থাকা প্রয়োজন, মোবাইল টেলিফোনেও সেগুলো কোনো না কোনো রূপে থাকতে হয়, তার সাথে আরো কয়েকটি বাড়তি বিষয় হয়। সেগুলো হচ্ছে

(a) ব্যাটারি: এই ব্যাটারি দিয়ে মোবাইল ফোনের জন্যে বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ করা হয়

(b) স্ক্রিন: এই স্ক্রিনটিতে মোবাইল ফোনের যোগাযোগের তথ্য দেখানো হয়

(c) সিম কার্ড: (SIM : Subscriber Identity Module) যেখানে ব্যবহারকারীর তথ্যগুলো সংরক্ষণ করা হয়

(d) রেডিও ট্রান্সমিটার ও রিসিভার : এগুলো দিয়ে মোবাইল ফোন তার নেটওয়ার্কের সাথে যোগাযোগ করে

(e) ইলেকট্রনিক সার্কিট: এটি মোবাইল টেলিফোনের জটিল কার্যক্রমকে ঠিকভাবে সম্পাদন করতে সাহায্য করে।
মোবাইল টেলিফোনে যোগাযোগ করার কাজটি সম্পন্ন করার জন্য পুরো এলাকাকে অনেকগুলো সেলে (Cell) ভাগ করে নেয় (চিত্র ১৩.১১) এজন্য মোবাইল টেলিফোনকে অনেক সময় সেলফোনও বলা হয়। এই সেলগুলো প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে ১ কিলোমিটার থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। প্রত্যেকটা সেলে একটি করে বেস স্টেশন (BTS Base Transceiver Station) থাকে। একটি এলাকার অনেকগুলো বেস স্টেশন একটা বেস স্টেশন কন্ট্রোলারের (BSC: Base Station Controller) মাধ্যমের মোবাইল সুইচিং কেন্দ্রের (MSC: Mobile Serviece Switching) সাথে যোগাযোগ করে। মোবাইল সুইচিং কেন্দ্রটি মোবাইল নেটওয়ার্কের একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এখানে প্রেরক আর গ্রাহকের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়।কেউ (প্রেরক) যখন তার মোবাইল ফোনে অন্য কোনো নাম্বারে (গ্রাহকের) ডায়াল করে, তখন প্রেরকের মোবাইল ফোনটি সে যে সেলে আছে তার বেস স্টেশনের (BTS) সাথে যুক্ত হয়। সেই বেস স্টেশন থেকে তার কলটি বেস স্টেশন কন্ট্রোলারের (BSC) ভেতর দিয়ে মোবাইল সুইচিং কেন্দ্রে (MSC) পৌঁছায়। মোবাইল সুইচিং কেন্দ্র তার কাছে রাখা তথ্যভাণ্ডার থেকে গ্রাহক সেই মুহূর্তে কোন সেলের ভেতর আছে সেটি খুঁজে বের করে। তারপর প্রেরকের কলটি গ্রাহকের সেই সেলের বেস স্টেশনের সাথে যুক্ত করে দেয় এবং সেই বেস স্টেশন থেকে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে রিং দেওয়া হয়।মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ককে সচল রাখার জন্য অনেক ধরনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমাদের মোবাইল টেলিফোন থেকে খুবই কম শক্তির সিগন্যাল ব্যবহার করে কাছাকাছি বেস স্টেশনের সাথে যুক্ত করা হয় এবং আমরা যদি একটি সেল থেকে অন্য সেলে চলে যাই, এই নেটওয়ার্ক সেটি জানতে পারে এবং এক বেস স্টেশন থেকে অন্য বেস স্টেশনে যোগাযোগটি স্থানান্তর করে দেয়। একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরে যদি অনেক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী থাকে, তাহলে ছোট ছোট অনেকগুলো সেল দিয়ে তাদের ফোন করার সুযোগ দেওয়া হয়। আবার গ্রামের কম জনবসতি এলাকায় একটি অনেক বড় সেল দিয়ে পুরো এলাকাতে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত রাখা হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে শুরুতে শুধু কথা বলার জন্য টেলিফোন উদ্ভাবন করা হয়েছিল। মোবাইল টেলিফোনে কথার সাথে সাথে এস.এম.এস. পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন স্মার্টফোন নামে নতুন যে ফোনগুলো এসেছে, সেগুলো কণ্ঠস্বরের (Voice) সাথে সাথে সব ধরনের তথ্য (Data) পাঠাতে পারে। কাজেই সেগুলো সরাসরি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হতে পারে এবং আগে যে কাজগুলো কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ছাড়া করা সম্ভব ছিল না, সেগুলো এই স্মার্ট ফোন দিয়ে করা সম্ভব হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই স্মার্টফোনগুলোর জন্য নানা ধরনের অ্যাপ (Application) তৈরি হচ্ছে, সেগুলো দিয়ে স্মার্টফোন আমাদের আরো নানা ধরনের কাজ করতে সাহায্য করে।স্মার্টফোন একদিকে আমাদের জীবনযাত্রার একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে, একই সাথে খুব সহজে স্মার্টফোনে ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়ার সুযোগের কারণে নতুন প্রজন্ম সামাজিক নেটওয়ার্ক-জাতীয় বিষয়গুলোতে অনেক অপ্রয়োজনীয় সময় ব্যয় করছে, সেটি এই মুহূর্তে শুধু আমাদের দেশের নয় সারা পৃথিবীর একটি বড় সমস্যা।
 

ফ্যাক্স
ফ্যাক্স শব্দটি হচ্ছে ফ্যাক্সিমিল (Facsimile)-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ফ্যাক্স করা বলতে আমরা বোঝাই কোনো ডকুমেন্টকে কপি করে টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া। বর্তমান যুগে কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট এই ফ্যাক্স প্রযুক্তিকে অনেক পিছনে ফেলে এসেছে, তারপরও প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই এখনো এই প্রাচীন কিন্তু নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যাচ্ছে। শুনে অবাক লাগতে পারে, ফ্যাক্স পাঠানো হয় টেলিফোন লাইন দিয়ে কিন্তু প্রথম ফ্যাক্সের ধারণাটি পেটেন্ট করা হয় টেলিফোন আবিষ্কারেরও ত্রিশ বছর আগে।


ফ্যাক্স মেশিন একই সাথে একটা ডকুমেন্টের কপি পাঠাতে পারে এবং এই মেশিনে পাঠানো একটি কপিকে প্রিন্ট করে দিতে পারে। ফ্যাক্স মেশিনে যখন একটি ডকুমেন্ট দেওয়া হয়, তখন সেখানে উজ্জ্বল আলো ফেলা হয়, ডকুমেন্টের কালো অংশ থেকে কম এবং সাদা অংশ থেকে বেশি আলো প্রতিফলিত হয়, সেই তথ্য  গুলো সংরক্ষণ করে ডকুমেন্টটির কপিকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে রূপান্তর করে টেলিফোন লাইন দিয়ে পাঠানো হয় ।টেলিফোন লাইনের অন্য প্রান্তে ফ্যাক্স মেশিনটি তার কাছে পাঠানো ডকুমেন্টের কপিটিকে একটি প্রিন্টারে প্রিন্ট করে দেয় (চিত্র ১৩.১২)। ফ্যাক্স মেশিন এখনো একটি নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি, এটি একটি ডকুমেন্টের কপিটিকে শুধু সাদা এবং কালো হিসেবে পাঠানো হয় বলে লিখিত ডকুমেন্টের জন্য ঠিক থাকলেও রঙিন কিংবা ফটোগ্রাফের জন্য উপযুক্ত নয়। এছাড়া বেশিরভাগ ফ্যাক্স মেশিনে থার্মাল পেপার ব্যবহার করা হয় বলে ডকুমেন্টটি খুব তাড়াতাড়ি অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে।
 

১৩.৪.৪ রেডিও, টেলিভিশন ও মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট সমস্যা
রেডিও এবং টেলিভিশন থেকে যে সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেগুলো প্রধানত শব্দদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকেই খুব হাই-ভলিয়ুমে রেডিও টেলিভিশন ব্যবহার করে। এতে নিজের কানের যেমন সমস্যা হতে পারে, তেমনি আশপাশে যারা থাকে, তাদেরও সমস্যা হতে পারে। যারা কানে হেডফোন লাগিয়ে সারাক্ষণ খুব বেশি শব্দে রেডিও বা মিউজিক শোনে, তারা মাথাব্যথা, কানে কম শোনা— এরকম স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়তে পারে।এছাড়া যারা দিনে তিন-চার ঘণ্টা থেকে বেশি টিভি দেখে, তাদের মাথাব্যথা, নিদ্রাহীনতা, চোখে ব্যথা বা চেখের দৃষ্টি কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে পারে। এ প্রতিক্রিয়াগুলো শিশুদের জন্য অনেক বেশি হয়ে থাকে। তাদের বিকাশমান কোষের যথোপযুক্ত বিকাশে টেলিভিশন থেকে নিঃসৃত বিকিরণ যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে।যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা সহজ। তাই শব্দদূষণ বা অন্যান্য সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে উচ্চ শব্দে রেডিও বা টিভি না চালানো, একনাগাড়ে অধিক সময় রেডিও এবং টিভি না শোনা বা না দেখা ভালো। শুধু তাই নয়, টেলিভিশন থেকে নিঃসৃত বিকিরণ থেকে রক্ষা পেতে টেলিভিশন থেকে নিরাপদ দূরত্বে বসে টিভি দেখতে হবে।

পৃথিবীতে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে এবং এর পিছনে শিশুদের অল্প বয়সে টেলিভিশন দেখার একটি যোগসূত্র থাকতে পারে। সেজন্য অটিস্টিক শিশুদের পরিবারে ডাক্তারেরা টেলিভিশন না দেখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।এরপর আসা যাক, মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে। মোবাইল ফোন হলো একটি নিম্ন ক্ষমতার রেডিও ডিভাইস, যা একটি ছোট এন্টেনার সাহায্যে একই সাথে রেডিও কম্পাঙ্কে বিকিরণ, প্রেরণ এবং গ্রহণ করে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় এ এন্টেনাটি ব্যবহারকারীর মাথার খুব কাছে থাকে। এ নিয়ে পৃথিবীর মানুষ এখন উদ্বিগ্ন যে এই মাইক্রো তরঙ্গের ক্রমাগত ব্যবহার হয়তো মাথায় ক্যান্সার রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এসব সমস্যার সৃষ্টি সম্পর্কে খুব বেশি প্রমাণ নেই। তবু অত্যধিক বিকিরণ থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বিকিরণের প্রভাব খুব বেশি না পড়লেও শিশুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, এ বিকিরণ শিশুদের মস্তিস্কের কোষ বিকাশে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে সাবধান করা হয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে। কিন্তু আমরা যদি এই প্রযুক্তি সুবিবেচকের মতো ব্যবহার না করে অবিবেচকের মতো অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করি, তাহলে খুব সহজেই আমাদের জীবনে আরো বড় নতুন নতুন জটিলতা হাজির হতে পারে।
 

 

 


 

Content added || updated By